বৈশাখ ১৪৩২

- 2 mins

Use Google Chrome, Brave, or other Chromium based browser
if you have trouble reading the Bengali letters.

রমজান মাসে বাংলাদেশে একটি বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ হচ্ছে, “যেই দেশে এত অভাব, এত মানুষের এত অভিযোগ, সেই দেশেই শপিং মলে দামী, ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেই কেন এত ভিড় থাকে?” রিয়াদাদ ইসলামের মতে, এটা বাঙালি জাতির হাজার বছরের একটা বৈশিষ্ট্য এবং সেটি হচ্ছে শৌখিনতা। এই শৌখিনতার কারণেই বাংলা একটি সময় ছিল সারা বিশ্বে নামকরা একটি স্থান। সেই ইতিহাসকেই বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে কাজ করছে জলসা ডট।

১৪ এপ্রিল, ২০২৫। পহেলা বৈশাখ, ১৪৩২। সকালে উঠেই আমরা চলে যাই সোনারগাঁও, যেটি একটি সময় ছিল বাংলার রাজধানী। সেই রাজত্ব, বিলাসিতা, আর ক্ষমতার প্রদর্শন আজ না থাকলেও আছে বহু স্থাপনা আর স্মারক, যা মনে করিয়ে দেয় সেই সোনালী যুগের। বাংলাদেশ লোকশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে নানাবিধ বস্তু এবং শিল্পকর্ম। জাদুঘরের পাশেই আছে শত শত বছর আগের গড়া পানাম নগর। যেখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য স্থাপনা। ছোটবেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে থাকার সুবাদে সোনারগাঁও আসার সৌভাগ্য বেশ কয়েকবারই হয়েছে। মন ভরে দেখা হয়েছে পোড়া ইটের তৈরি দালানগুলো।

Alt Text

রামপ্রসাদ চরের তীর


আমাদের আজকের গন্তব্য সোনারগাঁওয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মেঘনা নদী। প্রথমেই চলে যাই সোনারগাঁও জাদুঘরে। তারপর সেখান থেকে ৫ মিনিট দূরত্বেই অবস্থিত জলসা ডটের নিজস্ব একটি জায়গা। গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে নীল দেয়ালে সাদা রং দিয়ে আঁকা বেশ কিছু প্রতৃকিতি। সবগুলো ছবিই সোনারগাঁও এর বিখ্যাত স্থান গুলোকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে। জলসা ডটের প্রধান, রিয়াদাদ ইসলাম ছবি গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বাংলার ইতিহাস আমাদের আবার মনে করিয়ে দিলেন। আমাদের মনে ফুটিয়ে তুললেন বাংলার গৌরব। ঈশা খাঁ কিভাবে মোঘল সাম্রাজ্য থেকে বাংলাকে আগলে রেখেছিলেন তা শুনে অবশ্যই গর্বে বুকটা একটু জেগে উঠে। ক্ষণিকের জন্যে আমরা সকলেই হারিয়ে যাই সেই বাংলার গল্পে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার মানুষ এসে ভিড় করতো। বাণিজ্যের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক জায়গা ছিল সেই বাংলার রাজধানী, সোনারগাঁও। আসলেই এক অচেনা বাংলা।

কিছুক্ষণ গল্পের শেষে আমরা আবার বেরিয়ে পরি। এবারের গন্তব্য, মেঘনা নদী। ইঞ্জিনের নৌকা এগিয়ে চলে মেঘনার বুক চিরে। রিয়াদাদ ভাই আবার গল্পে মেতে উঠে, আমাদের মনে করিয়ে দেয় একসময় এই নদী হয়েই দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানাবিধ পণ্য আসত বাংলার রাজধানীতে। নদীর পারে অবস্থিত কিছু ফ্যাক্টরি মনে করিয়ে দেয় যে বাণিজ্যের সেই ধারা আজও কিছুটা হলেও বজায় আছে। নৌকা গিয়ে থামে রামপ্রসাদ চরে। সেখানে বেশ কিছুক্ষন ধরে চলে হই-হুল্লোড়, নদীতে ঝাপাঝাপির পরে আমরা আবার রওয়ানা দেই সোনারগাঁও এর দিকে। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পরে ছাদে বসে বসে গল্প করতে করতে হঠাৎ দেখলাম ঈশান কোণে কালো মেঘ। তাই দেখে তড়িঘড়ি করে আমরা রওয়ানা দিলাম বাড়ির উদ্দ্যেশে।

বাংলা বছরের প্রথম দিনে বাংলার একটি গৌরবজনক ইতিহাসকে অনেক কাছ থেকে দেখে একটা অদ্ভুতুড়ে ভালো লাগা কাজ করছিল।