বৃষ্টি

- 1 min

২০ মে, ২০২৫। বিকাল ৩:৪৫। 

বেশ কিছুক্ষন ধরেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। দমকা হাওয়া নেই, নেই কোন বিদ্যুতের ঝলকানি। এই বৃষ্টির মাঝেও যেন কেমন একটা গাম্ভির্য~ আছে, কে কি ভাবল তা দিয়ে তার কিছু যায় আসে না। তিনি যেন তার নিজের মত করেই একটানা নেমে যাচ্ছে। 

বৃষ্টি দেখার সময় বা “বৃষ্টিবিলাস” করতে করতে আমার প্রায়ই মনে পড়ে স্কুল জীবনের একটি দিনের কথা। অল্প কয়েক মাসের জন্যে আমাদের স্কুলে বাংলার এক স্যার আসে। তেমন রাশভারী, কঠোর তিনি ছিলেন না। বরং, তাকে দেখে আসলেই মনে হবে সে যেন কোন এক উপন্যাসের এক উদাসীন চরিত্র। এমনই এক বৃষ্টির দিনে সে ক্লাসে ঢুকেই সবাইকে জিজ্ঞেস করল, “বল তো, বৃষ্টি কি মানুষের মন ভালো করে, নাকি খারাপ?” 

এখানে একটু বলে রাখি, ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম বৃষ্টির ভক্ত। বৃষ্টি শুরু হলেই বাসার সকলের কাছে গিয়ে জানান দিতাম এই শুভ সংবাদের। বৃষ্টিতে ভিজে আমার কোনোদিন ঠান্ডা-জ্বর হয়নি। এটি আমার জীবনের অন্যতম গর্বের একটি বিষয়। যখনই আমার সুযোগ হয়েছে, আমি কোনো না কোনো ভাবে বৃষ্টিতে ভিজেছি। 

স্বভাবতই, এমন বৃষ্টি-পাগল মানুষের কাছে বৃষ্টি অবশ্যই মন রাঙিয়ে তোলার মত একটি জিনিস। কিন্তু স্যার বললেন, “বৃষ্টি দেখলে মানুষের মন খারাপ হয়।” তার এমন ভিত্তিহীন কথার বিরুদ্ধে আমরা বেশ কয়েকজনই জোর গলায় প্রতিবাদ জানালাম। স্যার তখন রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার কথা বলে বললেন, “বৃষ্টি মানুষের মন খারাপ করে। কারণ, বৃষ্টি মানুষকে তার অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়।” এমন কথায় আমি একটু থমকে গেলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, “আসলেই তো।”

এই ঘটনার অনেকদিন পরে একদিন আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। আমার বাবার ছাত্র পড়ানোর কারণে আমাদের বাসায় একটি রুমে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ ছিলো। আমি সেই বেঞ্চের উপরে পা তুলে বসে দেখে যাচ্ছিলাম অবিরাম বৃষ্টির ধারা। নিজের অজান্তেই মনের কোণায় থাকা মিষ্টি স্মৃতিগুলো জেগে উঠেছিল সেদিন। 

আজও বৃষ্টি দেখে মনে পড়ে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো। সময় বড় অদ্ভুত। সময়ের সাথে সাথে আমরা এগিয়ে যাই সামনের দিকে। পিছনে ফিরে তাকানো খুব বেশি হয়ে উঠে না। পড়ে থাকে স্মৃতিগুলো। কিছু সুন্দর, কিছু বেদনার।

বৃষ্টি এখন থেমে গিয়েছে। পাখির আবার শুরু করেছে কিচিরমিচির। আমার রুমের জানলা দিয়ে দূরের রাস্তায় ছুটে চলা গাড়িগুলোও দেখা যাচ্ছে। বাসার আশেপাশের গাছপালা যেন আরও সতেজ হয়ে উঠেছে। সবুজ গাছপালার মাঝে দূরে একটি লাল কৃষ্ণচূড়া তার নিজের অস্তিত্ব বেশ ভালো ভাবেই জানান দিচ্ছে। ঠিক যেমন ভাবে আছে মনের কোণে থাকা স্মৃতিগুলো।